News Hungama:
কলকাতা, ১৯ নভেম্বর ২০২৫: বিশ্ব সিওপিডি দিবস উপলক্ষে মণিপাল হসপিটালস কলকাতা ধূমপান ত্যাগ ক্লিনিক এবং পালমোনারি রিহ্যাবিলিটেশন ও ভ্যাকসিনেশন ক্লিনিকের শুভ উদ্বোধন করল। শ্বাসযন্ত্রের রোগ প্রতিরোধ ও যত্নকে আরও শক্তিশালী করতে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা যুক্ত হওয়ার ফলে হাসপাতালের সামগ্রিক পালমোনারি কেয়ার প্রোগ্রাম আরও উন্নত ও বিস্তৃত হল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত ক্রিকেটার ও উপস্থাপিকা ঝুলন গোস্বামী। সঙ্গে ছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ, ফুটবল কিংবদন্তি গৌতম সরকার, সাংসদ সায়নী ঘোষ, বিধায়ক সুজিত বসু, এবং একাধিক আইএএস, আইপিএস কর্মকর্তা ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা। তাঁদের উপস্থিতি ফুসফুস–স্বাস্থ্য সচেতনতা অভিযানে উৎসাহ ও ব্যাপক সমর্থন যোগ করেছিল।
নতুন ধূমপান ত্যাগ ক্লিনিকে ধূমপান ছাড়তে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য পরিকল্পিত কাউন্সেলিং, আচরণগত সহায়তা, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা এবং পর্যায়ক্রমিক ফলো-আপ দেওয়া হবে। পাশাপাশি পালমোনারি রিহ্যাবিলিটেশন ও ভ্যাকসিনেশন ক্লিনিক–এ ব্যক্তিবিশেষের শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী বিশেষ পুনর্বাসন পরিকল্পনা, শ্বাসপ্রশ্বাসের থেরাপি, এবং বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ধারিত ভ্যাকসিনেশন সিডিউলের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুস–যত্ন আরও জোরদার করা হবে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে প্রতিরোধযোগ্য সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে এই পরিষেবাগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই উদ্যোগগুলি প্রমাণ করে যে মণিপাল হসপিটালস সময়মতো চিকিৎসা, প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং রোগীকেন্দ্রিক সেবার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।
অনুষ্ঠানের সূচনায় মণিপাল হসপিটালস কলকাতার বিভিন্ন ইউনিটের পালমোনোলজি কনসালট্যান্টরা একটি উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করেন। সেখানে সিওপিডির লক্ষণ, পরিবেশগত কারণ, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণ, ধূমপান ত্যাগের গুরুত্ব এবং ভ্যাকসিনেশনের ভূমিকা নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য সাধারণ মানুষকে শ্বাসযন্ত্রের রোগ সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করতে এবং ফুসফুসের প্রতি আরও যত্নশীল হতে উৎসাহিত করে।
এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লিনিকগুলির উদ্বোধন শেষে অভিজ্ঞ পালমোনোলজিস্টদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় উঠে আসে দেশে দ্রুত বাড়তে থাকা সিওপিডির বোঝা, ধূমপান ছাড়ার আচরণগত ও চিকিৎসাগত দিক, এবং ফুসফুস–সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের বাড়তি প্রয়োজন। প্যানেলে ছিলেন— ডা. দেবরাজ জাশ (ডিরেক্টর, পালমোনোলজি, মণিপাল হসপিটালস কলকাতা),ডা. সুরঞ্জন মুখার্জি (সিনিয়র কনসালট্যান্ট, রেসপিরেটরি মেডিসিন/পালমোনোলজি, মণিপাল হসপিটাল ঢাকুরিয়া),ডা. অর্ণব বেড়া (কনসালট্যান্ট, পালমোনোলজি, মণিপাল হসপিটাল সল্টলেক), ডা. মৌমিতা চ্যাটার্জি (কনসালট্যান্ট, পালমোনোলজি, মণিপাল হসপিটাল ইএম বাইপাস) এবং ডা. আয়ুষ গোয়েল (কনসালট্যান্ট, পালমোনোলজি, মণিপাল হসপিটাল ঢাকুরিয়া ও ইএম বাইপাস)। তাঁদের আলোচনা চিকিৎসক, রোগী এবং সাধারণ মানুষের জন্য কার্যকর ও তথ্যসমৃদ্ধ দিশা দেয়।
ডা. দেবরাজ জাশ বলেন,“ভারতে বিশ্বের মোট ধূমপায়ীর প্রায় ১২% বাস করে এবং প্রতি বছর ধূমপান–সংক্রান্ত কারণে ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ধূমপান সিওপিডির প্রধান কারণ এবং দেশে বর্তমানে ৫ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত। সুসংগঠিত কাউন্সেলিং ও চিকিৎসা সহায়তার মাধ্যমে ধূমপান ছাড়ার সফলতা অনেক বেড়ে যায় এবং রোগের অগ্রগতি কমে। নতুন রিহ্যাবিলিটেশন ও ভ্যাকসিনেশন পরিষেবা যুক্ত হওয়ায় রোগীরা এখন আরও সম্পূর্ণ ও কার্যকর চিকিৎসা পাবেন, যা ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াবে, হাসপাতালে ভর্তি কমাবে এবং জীবনের মান উন্নত করবে।”
ডা. অর্ণব বেড়া বলেন, “ফুসফুস–সমস্যা অনেক সময় মানুষ বুঝতেই পারে না, যতক্ষণ না সমস্যা খুব বাড়ে। তাই প্রতিরোধমূলক যত্ন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোকোকাল ভ্যাকসিন বয়স্ক, ধূমপায়ী, ফুসফুস–রোগী এবং দুর্বল ইমিউনিটির মানুষদের জন্য বিশেষ উপকারী। হাঁপানি, ধূমপানের অভ্যাস বা বারবার শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ হওয়া তরুণরাও এই ভ্যাকসিন থেকে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা পান। আমরা চাই মানুষ সঠিক বয়সে সঠিক ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন, যাতে ফুসফুসের অপ্রয়োজনীয় জটিলতা এড়ানো যায়।”
ডা. অয়নাভ দেবগুপ্ত, রিজিওনাল চিফ অপারেটিং অফিসার (পূর্বাঞ্চল), মণিপাল হসপিটালস বলেন, “সিওপিডি ভারতে এখনো একটি বড় স্বাস্থ্য–ঝুঁকি এবং আইসিএমআর তথ্য অনুযায়ী দেশের মোট মৃত্যুর প্রায় ১০% এর জন্য এই রোগ দায়ী। তাই আমরা প্রতিরোধমূলক ও সময়মতো চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছি। এই দুটি নতুন ক্লিনিক রোগীদের জন্য সঠিক নির্দেশনা, প্রাথমিক সহায়তা এবং এক জায়গায় পূর্ণাঙ্গ এমন পরিষেবা দেবে, যা ফুসফুসের রোগ আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।”
এই বিশেষ পালমোনারি পরিষেবাগুলির উদ্বোধনের মাধ্যমে মণিপাল হসপিটালস কলকাতা প্রতিরোধমূলক, বৈজ্ঞানিক এবং রোগীকেন্দ্রিক শ্বাসযন্ত্র–চিকিৎসাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল। ধূমপান ত্যাগ, রিহ্যাবিলিটেশন এবং ভ্যাকসিনেশন—এই তিনটি শক্তিশালী পরিষেবা একসঙ্গে যুক্ত হওয়ায় রোগীরা এখন আরও কার্যকর, সম্পূর্ণ এবং দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুস–যত্ন পাবেন।

