Monday, November 24, 2025
Homeকলকাতাগৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধান এবার অনলাইনে

গৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধান এবার অনলাইনে

News Hungama:

বাঙালির এককালে জ্ঞান-চর্চা ছিল। সাহিত্য-ইতিহাস-সন্দর্ভ তো ছিলই, তার সঙ্গে ছিল ভারতকোষ কিংবা বিশ্বকোষের মতন সম্ভ্রম জাগানো বিপুল সব জ্ঞান প্রকল্প। এই ধারার অল্প-পরিচিত একটি কোষগ্ৰন্থ ‘গৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধান’। সংকলক হরিদাস দাস বাবাজী। প্রথম জীবনে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। দুটি বিষয়ে এম এ। ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। গোল্ড মেডালিস্ট। তারপর হয়ে গেলেন নিষ্কিঞ্চন বৈষ্ণব বাবাজী। কিন্তু তাঁর জীবন নিয়োজিত হয়েছিল গ্রন্থ-সেবায়। বিশেষত, বৈষ্ণব গ্ৰন্থের পুনরুদ্ধার, সংগ্রহ, সংকলন, সম্পাদনা, অনুবাদ, প্রকাশনা ছিল তাঁর ব্রত। অন্তত পঁয়ষট্টিখানি বই প্রকাশ করেন নবদ্বীপের হরিবোল কুটির থেকে। তাঁর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ ছিলেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় থেকে সুকুমার সেন।

প্রায় একক প্রচেষ্টায় তিনি সংকলন করেছিলেন গৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধান — সংশ্লিষ্ট ইতিহাস, ভূগোল, ভাষা, সাহিত্য, দর্শন, পুরাতত্ত্ব, সঙ্গীত, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি বহুবিধ বিষয়ে এক আশ্চর্য এনসাইক্লোপিডিয়া। শুধু বৈষ্ণব সমাজের জন্য নয়, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির মনোযোগী পাঠকের জন্য অপরিহার্য।

বিপুল আয়তনের এই বইটি এবার সহজলভ্য হয়ে উঠল ইন্টারনেটের দৌলতে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রধান ড. অভিষেক বসুর তত্ত্বাবধানে দীর্ঘদিন ধরেই এই কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ‘চরিতাবলী’ খণ্ডটি অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে। এবার প্রকাশিত হল ‘তীর্থাবলী’ নামক খণ্ড। আনন্দের কথা, পুরো ওয়েবসাইট-ই (vaishnavabhidhan.org) সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজড।

‘তীর্থাবলী’-র অন্তর্জাল উদ্বোধন উপলক্ষে সম্প্রতি মহাবোধি সোসাইটিতে হয়ে গেল একটি আলোচনা চক্র — ‘জ্ঞানচর্চার নিভৃত ব্যাপ্তির উত্তরাধিকার’। আলোচকদের অন্যতম, অধ্যাপক সুমিত চক্রবর্তী বাংলা ভাষার প্রচলিত অভিধানগুলির সঙ্গে তুলনায় হরিদাস দাসের কাজের মৌলিক গুরুত্বের কথা বলেন। গদ্যকার স্বপন পাণ্ডার ভাষায়, ‘যেন বিগত পাঁচ শতাব্দীর সারস্বত উত্তরাধিকার এবার বিশ্ব পাঠক সমাজের সামনে উন্মুক্ত।’ অধ্যাপক মানস কুণ্ডুর মতে, হরিদাস দাস বাবাজীর অভিধানে ভারতীয় জ্ঞানচর্চার ধারার সঙ্গে সঙ্গে পাশ্চাত্যের গবেষণা পদ্ধতির সংমিশ্রণ ঘটেছে। প্রকল্প সম্পাদক অভিষেক বসু বলেন, ‘চৈতন্যদেব গোস্বামীদের গ্রন্থরচনা এবং লুপ্ত তীর্থ উদ্ধারের যে গুরুদায়িত্ব দিয়েছিলেন, হরিদাস দাসের কাজকে তারই উত্তরকালের অনুরণন হিসেবে দেখতে হবে। আমাদের উচ্চকিত আত্মপ্রচারের সময়ে এইরকম নিভৃত অথচ বিদগ্ধ মানুষদের ফিরে মনে করা দরকার।’

প্রকল্পটির বাস্তবায়নে যাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন, সেই ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারের পক্ষে সুমন্ত রুদ্র বলেন, ‘এমন ঐতিহাসিক কাজে সামিল হতে পেরে আমরা ধন্য। এই অভিধান এবার সমস্ত পাঠকের কাছে পৌঁছে যাবে।’ তাঁর আশা, সম্পাদকের যোগ্য নেতৃত্বে অবশিষ্ট খণ্ডগুলিও খুব দ্রুত ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments